একটি দুঃসাহসিক পালানো দেশীয় খবর, ফরাসি সমুদ্রবন্দর তুল থেকে অভিযান শুরু হয়।
রোমাঞ্চকর গল্প নয়। যাইহোক, ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে এগিয়েছে সেই বিন্দু থেকে স্পেন, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ভারত
এবং পাকিস্তানি হানাদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ পর্যন্ত, তা কোনো রোমাঞ্চের বাইরে। সুদূর ইউরোপের
আটজন নাবিক যেভাবে ইউরোপ থেকে পালিয়ে এসে বুকে মাইন বেঁধে সাগরের অন্ধকার রাতে মাইল
মাইল সাঁতরে সাগরে ও সমুদ্রবন্দরে শত্রুদের আঘাত করেছিল, সেই গল্প নিয়ে।প্রথমে এই বীর বীর
যোদ্ধাদের পরিচয় দেওয়া যাক। তারা খুলনার চিফ পেটি অফিসার গাজী মোহাম্মদের সন্তান।পশ্চিম পাকিস্তান
১৯৬৯ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন কিনেছিল। এর মধ্যে একটির নাম পিএনএস ম্যাংরো।
এতে ৫৬ জন নৌসেনা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:ukhealthz.xyz
একটি দুঃসাহসিক পালানো দেশীয় খবর
রহমত উল্লাহ বীরপ্রতীক, ফরিদপুরের পেটি অফিসার সৈয়দ মো. মোশাররফ হোসেন, কুমিল্লা পেটি অফিসার আমানুল্লাহ শেখ বীর বিক্রম, রংপুরের নাবিক বদিউল আলম বীর উত্তম, চট্টগ্রাম বেতার অপারেটর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী বীর উত্তম, নোয়াখালী মেকানিক মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ বীরপ্রতীক, টাঙ্গাইল ইলেকট্রিকাল মেকানিক শহীদ আব্দুর রহমান বিক্রম। .এদের মধ্যে ১৩ জন বাঙালি। প্রশিক্ষণ শেষে সাবমেরিনটি পাকিস্তানে উড্ডয়নের পরিকল্পনা ছিল। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল যাত্রা শুরু হবে। তার আগে অন্য সাবমেরিনটি পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে ম্যাংগ্রোতে নৌ প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ বিবিসি নিউজ বুলেটিন থেকে বাঙালি নৌবাহিনীর কানে আসে অত্যন্ত খারাপ খবর। তারা জানতে পারে যে পশ্চিমা হানাদাররা দেশের নিরীহ জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা
ঘোষণা করেন। দেশের বীর সন্তান এবং বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শত্রুর মোকাবিলা করেন। ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের বুকে জ্বলে প্রতিশোধের আগুন।কিন্তু বুঝলেন না। রেডিও অপারেটর আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী বীর উত্তম ২১ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশে ফ্রান্স থেকে তাদের পালানোর দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেছিলেন। এছাড়াও, নৌকমান্ডো বলেন। খলিলুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থেও এর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এই সারসংক্ষেপ সেখান থেকে।দেশে গণহত্যার খবর শোনার পর বাঙালি নৌবাহিনী একে অপরের সঙ্গে খুব গোপনে কথা বলে বুঝতে পারে তাদের মধ্যে ৯ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত। প্রথমে তারা ভেবেছিল সাবমেরিন উড়িয়ে দেবে।ফরাসি কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করতে হস্তক্ষেপ করতে পারে এই ভয়ে ফরাসি নাবিকরা সাবমেরিনটি ছেড়েছিল বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি।
কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক
গণমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাচ্ছেন বলে খবর পেয়ে তারা ফ্রান্স থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।কাজটি সহজ ছিল না। বাঙালি নৌবাহিনী তুল থেকে পালিয়ে নিরপেক্ষ দেশ সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগেই বড় ঝুঁকি নিয়ে লকার থেকে পাসপোর্ট বের করে একে অপরের কাছে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ মার্চ একে একে এই ৯ জন বাঙালি নৌবাহিনী আলাদাভাবে নৌঘাঁটি ত্যাগ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা গাজী মো. রহমত উল্লাহর নেতৃত্বে একজন ছাড়া বাকি সবাই মিলিত হয় মার্শ শহরে। এখান থেকে ট্রেনে ওঠেন জেনেবাগামী।পরের দিন সকালে তারা জেনেভা পৌঁছে। কিন্তু ভিসা না থাকায় তারা দেশে প্রবেশ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে পরের ট্রেনটি ফ্রান্সে ফিরে আসে। এবার তারা লিওন শহরে অবতরণ করলেন। এরই মধ্যে তুল থেকে স্পেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ম্যাংরো সাবমেরিন।